বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা ও প্রতিষ্ঠাতাঃ
মানুষের মাঝে লুকিয়ে থাকা অনন্ত সম্ভাবনা যার ছোঁয়ায় পূর্ণতা পেয়ে প্রকাশিত হয়, তার নাম হলো ‘শিক্ষা। পবিত্র কোরআন মজিদে আল্লাহ তা’লা মানবজাতির প্রতি সর্ব প্রথম যে প্রত্যাদেশ নাযিল করেন, তা হলো ‘ইক্করা’ অর্থাৎ ‘পড়। নিজেকে ও প্রভূকে জানতে হলে শিক্ষার বিকল্প নাই। তাই ইমাম গাজ্জালী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি যথার্থ বলেছেন - “ মান আ’রাফা নাফসাহু ফাক্কাদ আ’রাফা রাব্বাহু ’’ - অর্থাৎ যে নিজেকে চিনেছে সে তাঁর প্রভূকে চিনেছে।
সমাজ সচেতন ও দুর্ভাগা মানুষদের প্রতি সহানুভুতিশীল ব্যক্তিগন সর্বকালেই সবার জন্য আশীর্বাদ স্বরুপ। ভ্রাতৃভাবের প্রতিষ্ঠাতা ধর্মের মূল শিক্ষা হলো ‘প্রেম’ এবং সে প্রেমের কারণে কিছু লোক অন্যের তরে নিজেদের সুখ এবং কল্যাণকে বিসর্জন দেন।
হযরত শাহ সুফী সৈয়দ আবদুল লতিফ আমানটুলী রাহমাতুল্লাহি আলাইহ এবং তদীয় পুত্র হযরত শাহ সুফী সৈয়দ তাজ ইসলাম মাদ্দাজিল্লুহুল আলী হলেন তেমনি আশীর্বাদ স্বরুপ ব্যক্তিত্ব । যাঁরা পরার্থে তাঁদের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন।
হযরত সৈয়দ শাহ সুফী তাজ ইসলাম মাদ্দাজিল্লুহুল আলী এর জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তাঁর জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ আদর্শপূর্ণ এবং কর্মময়। ‘বিশ্ব দরবার প্রাথমিক বিদ্যাল ‘ শিক্ষা বিস্তারে যে ভূমিকা রাখছে তা তাঁরই অবদান। ১৯৮৯ সালের জানুয়ারী মাসে দরবার এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় এই বিদ্যালয়। এককভাবে তিনি বিদ্যালয়ের জন্য ভূমি দান করেন এবং প্রাথমিক অবস্থায় অবকাঠামো নির্মাণ, আসবাবপত্র তৈরি ও বিদ্যালয় পরিচালনায় যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করেন।
প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই অঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়ালেও তিনি শিক্ষার্থীদের পরবর্তী উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অসুবিধা-অন্তরায়ের কথা বিবেচনা করে, বিশেষত: সমাজের অনগ্রসর ও পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছেলে-মেয়েদের সুন্দর ভবিষ্যৎ রচনাকল্পে মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। এ যেন প্রকৃত শিক্ষকের উপলব্ধি, যিনি শিক্ষার্থীর পথ থেকে সব অন্তরায় সরানোর কাজে মগ্ন।
যথারীতি ভক্ত-আশেকান এবং এলাকার সচেতন অভিভাবকদেরকে তিনি তাঁর এ- অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। সে অভিপ্রায় অনুযায়ী ০১/০১/১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে দরবার এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘‘বিশ্ব দরবার মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি একক ভাবে এক একর জমি দান করেন (যার আনুমানিক মূল্য তখনকার সময়ে কম-বেশী এক কোটি টাকা এবং বর্তমান মূল্য কম-বেশী পাঁচ কোটি টাকা) এবং প্রাথমিক অবস্থায় অবকাঠামো নির্মান, আসবাব পত্র তৈরী ও যাবতীয় ব্যয় বহন করেন। এ কাজে তাঁকে সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করেন তাঁর দুই শাহজাদা সৈয়দ শাহ সুফী মুরাদ মোহাম্মদ তাজ এবং সৈয়দ শাহ সুফী লতিফুল ইসলাম নাঈম। উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠাতা হুজুর কিবলার বড় শাহজাদা সৈয়দ শাহ সূফী মুরাদ মোহাম্মদ তাজ প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে বিদ্যালয়টির সহ-সভাপতি এবং পরবর্তীতে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দেশ-বিদেশ ভ্রমণের সুবাদে তিনি বিভিন্ন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্বদের সান্নিধ্য লাভ করেন। এরই ফলশ্রুতিতে বিদ্যালয়টিকে তিনি আধুনিকতার ছাঁচে গড়ে তোলার প্রয়াস পান। ইতোমধ্যে বিদ্যালয়টি জে.এস.সি; এস.এস.সি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অত্র উপজেলায় শীর্ষ স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। আশা করা যায়, এই ধারাবাহিকতায় বিদ্যালয়টি উত্তরোত্তর সাফল্যের উচ্চ শিখরে আরোহন করবে।